সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৫ অপরাহ্ন
অনলাইন ডেক্স :
দেশে ১ দশমিক ২৭ শতাংশ জন্মহারের ধারাবাহিকতা ২০১৩ সাল থেকে অব্যাহত রয়েছে। একই সময়ে প্রত্যাশিত গড় আয়ু ৭০ বছর ৫ মাস থেকে বেড়ে দাড়িয়েছে ৭২ বছরে। উচ্চ জন্মহার আর গড় আয়ু বৃদ্ধির কারণে দেশের জনসংখ্যাও বাড়ছে। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের জানুয়ারিতে দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৩৬ লাখ ৫০ হাজারে উন্নীত হয়েছে।
এর মধ্যে ৮ কোটি ১৯ লাখ ১০ হাজার পুরুষ ও ৮ কোটি ১৭ লাখ ৪০ হাজার নারী। চলতি অর্থবছরের শুরুতে অর্থাৎ গত বছরের জুলাইয়ে দেশের জনসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ২৭ লাখ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে জনসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৮ লাখ। সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ সব তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল বুধবার বিবিএস অডিটরিয়ামে মনিটরিং দ্য সিচুয়েশন অব ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস অব বাংলাদেশ (এমএসভিএসবি) শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিবিএস মহাপরিচালক মোঃ আমীর হোসেনর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন এমএসভিএসবি প্রকল্পের পরিচালক একেএম আশরাফুল হক। বক্তব্য রাখেন আইসিডিডিআরবি’র গবেষক আবদুর রাজ্জাক।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে দেশের মানুষের গড় আয়ু ৭২ বছরে উন্নীত হয়েছে। গত ২০১৬ সালে দেশের মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু ছিল ৭১ বছর ৭ মাস ৬ দিন। ২০১৫ সালে গড় আয়ু ছিল ৭০ বছর ১০ মাস ২৪ দিন। তবে পুরুষের তুলণায় নারীদের গড় আয়ু ৩ বছর বেশি। দেশের পুরষদের গড় আয়ু ৭০ বছর ৭ মাস ৯ দিন। অন্যদিকে নারীদের গড় আয়ু ৭৩ বছর ৬ মাস
প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রসবকালে নারী ও শিশুমৃত্যু, বছর বয়সী শিশুদের মৃত্যু, প্রজনন স্বাস্থ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা, বিদ্যুত, পানি, স্যানিটেশনসহ বিভিন্ন সূচকে কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে উন্নতি হচ্ছে। এর ফলেই গড় আয়ু বাড়ছে বলে অনুষ্ঠানে বক্তারা দাবি করেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পরিকল্পনা মন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল বলেন, চলতি অর্থবছর মোট দেশজ উৎপাদনে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি হতে পারে। অর্থবছরের প্রথম নয় মাসের প্রাক্কলিত হিসাবে প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ হিসাব করা হয়েছিল। এবার প্রাক্কলিত হিসাবকে ছাড়িয়ে যাবে প্রবৃদ্ধি। তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ এগিয়ে আছে। ১০ বছর আগে বিশ্বের অর্থনৈতিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৫৮ তম। এখন হয়েছে ৪২ তম। অর্থাৎ ১৬টি দেশকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গেছে দেশ। ২০৪১ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশে^ ৩৯ তম অবস্থানে উঠে আসবে বলে তিনি ধারণা করেন।
জš§নিয়ন্ত্রন পদ্ধতি ব্যবহারের হার ২০১৭ সালে আগের বছরের চাইতে কিছুটা বেড়েছে বলে দাবি করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ জš§ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। ২০১৬ সালে এর হার ছিল ৬২ দশমিক ৩ শতাংশ। পল্লী অঞ্চলের ৫৯ দশমিক ৪০ শতাংশ ও শহর এলাকার ৬৬ দশমিক ৬০ শতাংশ দম্পতি জš§নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করেন বলে দাবি করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
পুরুষদের প্রথম বিবাহের গড় বয়স কিছুটা কমে আসছে বলে দাবি করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে। এতে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে পুরুষদের বিবাহের গড় বয়স ২৫ দশমিক ১০ বছরে নেমে এসেছে। আগের বছর দেশের পুরুষেরা গড়ে ২৫ দশমিক ২ বছর বয়সে বিয়ে করেছেন। আর ২০১৫ সালে পুরুষদের বিবাহের গড় বয়স ছিল ২৫ দশমিক ৩ বছর। দেশে অবিবাহিত পুরুষ জনসংখ্যার হার ৩৮ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে এসেছে। আগের বছর এর হার ছিল ৩৯ দশমিক ৪ শতাংশ।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, নারীদের তালাক ও বিবাহ বিচ্ছিন্ন অবস্থার থাকার প্রবণতা বেড়েছে। ২০১৭ সালে এর হার হয়েছে ১০ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ২০১৬ সালে বিবাহ বিচ্ছিন্ন নারীর হার ছিল ১০ শতাংশ। ১০ বছরের বেশি বয়সী নারীদের মধ্যে বিবাহিত ও অবিবাহিতের হার খুব একটা বাড়েনি।
শিশুমৃত্যুর হারও সাম্প্রতিক সময়ে ধারবাহিকভাবে কমছে বলে দাবি করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে। এতে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালে প্রতি হাজার জীবিত শিশুর মধ্যে ৫ বছর বয়সের আগেই মারা গেছে ৪১ শিশু। ২০১৭ সালে এ সংখ্যা ৩১ এ নেমে এসেছে। অন্যদিকে ২০১৩ সালে মাতৃ মৃত্যুর অনুপাত ছিল ১ দশমিক ৯৭। ২০১৭ সালে এসে কমে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৭২ এ নেমে এসেছে।
দেশে বিদ্যুতের আওতায় আসা মানুষের হার ৮৫ দশমিক ৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিএস। ২০১৬ সালে ছিল ৮১ দশমিক ২ শতাংশ। ২০১৩ সনালে মাত্র ৬৭ দশমিক ৮ ভাগ মানুষ বিদ্যুতের সুবিধা পেতেন। দেশের ৫ দশমিক ৮ শথাংশ মানুষ স্যের বিদ্যুত ব্যবহার করে বলে উঠে এসেছে প্রতিবেদনে। আর কেরোসিন বাতির আলো ব্যবহার করছেন ৮ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ।
দেশে স্বাক্ষরতার হারও বাড়ছে বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, ৭ বছরের বেশি বয়সী জনসংখ্যার স্বাক্ষরতার হার ৭১ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০১৭ সালে দাঁড়িয়েছে ৭২ দশমিক ৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া ১৫ বছর ও তার চেয়ে বেশি বয়সী জনসংখ্যার শিক্ষার হার ৭২ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭২ দশমিক ৯ শতাংশ হয়েছে। এক্ষেত্রে ২০১৭ সালের হিসাব অনুযায়ী পুরুষের শিক্ষার হার ৭৫ দশমিক ৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। নারীদের শিক্ষার হার বেড়ে দাড়িয়েছে ৭০ দশমিক ১ শতাংশ।
২০১৭ সালের হিসেবে দেশে প্রতি এক হাজার মানুষের মধ্যে প্রতিবন্দী ৮ দশমিক ৯ জন। এর মধ্যে মহিলাদের তুলনায় পুরুদের প্রতিবন্দীতার হার বেশি। প্রতি হাজারে ৯ দশমিক ৮ জন পুরুষ ও ৮ জন নারী প্রতিবন্ধী রয়েছেন।
Leave a Reply